cosmic string
কসমিক স্ট্রিং:
এক মহাজাগতিক চিন্তার অবসান!
বিগ ব্যাং কসমোলজিতেতে বহুল পরিচিত তত্ত্ব। বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির রহস্য ব্যাখা করতে এ পর্যন্ত অনেক তত্ত্ব প্রস্তাবিত হয়েছে। তন্মধ্যে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও গৃহীত তত্ত্বটির নামই বিগ ব্যাং বা মহাগর্জন তত্ত্ব। এছাড়া অন্য কোনো তত্ত্ব ধরে টিকতে পারেনি! বিগ ব্যাং তত্ত্বটি এখন কসমোলজির প্রাণ বলা যায়।
১৯১৫ সালে আইনস্টাইনের তার বিশ্বখ্যাত তত্ত্ব জেনারেল রিলেটিভিটি প্রকাশ করলেন। তবে অদ্ভুদ ব্যাপার ছিল যে বক্রজ্যামিতির ফলাফলগুলো প্রসারণশীল মহাবিশ্ব ছাড়া মেলে না। এদিকে আইনস্টাইন সাহেবও স্থির মহাবিশ্বে বিশ্বাসী। তাই তিনি একটি বাড়তি মহাকর্ষীয় ধ্রুবক এনে তার সূত্রে লাগিয়ে মহাবিশ্বের প্রসারণকে থামিয়ে দিলেন, থুক্কু স্থির মহাবিশ্ব প্রমাণের চেষ্টা করলেন। কিন্তু বিশের দশকের শেষ দিক জ্যোতির্বিদ এডুইন হাবল তার ১০০ ইঞ্চি টেলিস্কোপ দিয়ে গ্যালাক্সিদের রক্তিম সরণ পর্যবেক্ষণ করে প্রমাণ করলেন যে মহাবিশ্ব প্রতিনিয়ত প্রসারিত হচ্ছে। যে বস্তু কোনো বস্তু থেকে যতো দূরে তার প্রসারণও ততো বেশি বেগে হচ্ছে। তো এই ব্যাপারটি থেকেই বিগ ব্যাং তত্ত্বের সূচনা হয়েছে। জর্জ গ্যামো বললেন, যেহেতু মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তু একে অপর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, সেহেতু অতীতে নিশ্চয়ই কোনো একসময় মহাবিশ্বের সবকিছুই একসাথে ছিল এবং বিস্ফোরিত হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে ( চিন্তাশীলদের জন্য জানিয়ে রাখি যে এটি আমাদের প্রচলিত ধ্যান-ধারণার মতো কোনো বিস্ফোরণ নয় )। গ্যামো হিসাব করে দেখালো যে তাহলে মহাবিশ্বের আদি আলো কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড পুরো মহাবিশ্বে ছড়িয়ে থাকার কথা, যা পরে প্রমাণিতও হয়েছে। এছাড়াও আধুনিক বিগ ব্যাং মডেল অনুযায়ী মহাবিশ্বের গড় তাপমাত্রা হওয়া উচিত প্রায় ৩ ডিগ্রী কেলভিন, যা প্রমাণিত ( ২.৭৩ ডিগ্রী কেলভিন পাওয়া গেছে)। আবার হাইড্রোজেন-হিলিয়াম গ্যাসের অনুপাত পর্যবেক্ষণ করেও ( নীহারিকা থেকে) বিগ ব্যাং থিওরির প্রমাণ পাওয়া গেছে!
তো এই বিগ ব্যাং কিন্তু একেবারে নিখুঁত কোনো তত্ত্ব ছিল না। ব্যাপারটা একটু খোলাসা করি। মহাবিশ্বের সবকিছু বিগ ব্যাংয়ের ১০^-৪৩ সেকেন্ড পর্যন্ত শক্তিরূপে ছিল। অর্থাৎ আইনস্টাইন E=mc^2 সূত্র মেনে তখনো শক্তি থেকে পদার্থের সৃষ্টি হয়নি। বিগ ব্যাংয়ের ২০ মিনিট পরে প্রথমবারের মতো প্রোটন ও নিউট্রন মিলে নিউক্লিয়াস গঠিত হয়। আর ৩৮০,০০০ বছর পরে নিউক্লিয়াস ইলেক্ট্রনকে কব্জা করে পরমাণু তৈরি করে। আর পরে এই পরমাণু দিয়েই সব মহাজাগতিক বস্তুর সৃষ্টি হয়েছে। বিগ ব্যাং তত্ত্বানুসারে মহাবিশ্বের সকল জায়গায় শক্তি কিংবা পদার্থের পরিমাণ সমান হওয়া উচিত। কিন্তু বাস্তবে তা দেখা যায় না। একদিকে ব্ল্যাকহোলের ঘনত্ব ব্যাপক, আরেকদিকে মহাবিশ্বের অধিকাংশ ফাঁকা স্থানের ঘনত্ব প্রতি ঘনসে.মিতে মাত্র একটি কণা। কসমোলজিস্টরা এ নিয়ে বিরাট চিন্তার মধ্যে পড়ে গেলেন!
অনেক বিজ্ঞানীদের মতে বিগ ব্যাংয়ের পর শক্তির সুষম বণ্টন হয়নি। এর পক্ষে ১৯৭০ সালে ইংলিশ পদার্থবিদ থমাস কিবল বিগ ব্যাংয়ের পর যত সময় পর্যন্ত সকল বল একসাথে ছিল তার একটি ম্যাথমেটিক্যাল মডেল উপস্থাপন করেন।
এই মডেল অনুসারে বিগ ব্যাংয়ের পর অতি উচ্চ গতিতে মহাবিশ্বের স্ফীতির জন্য শক্তি সুষমভাবে বণ্টিত না হয়ে স্ট্রিং আকারে বন্টিত হয়। এই মহাজাগতিক স্ট্রিংকেই কসমিক স্ট্রিং বলে। এই স্ট্রিংগুলো পুরোটাই ছিল শক্তির তৈরি। কসমিক স্ট্রিংগুলো আলোর গতিতে ছুটে যেতে পারতো। মহাজাগতিক তন্তুগুলো আসলে ১ মাত্রার ছিল, তাই এগুলো দৈর্ঘ্য বরাবর ছুটে যেতে পারতো ( ঠিক ১ মাত্রা বললে ভুল হবে, কসমিক স্ট্রিংগুলোর প্রস্থ ছিল অতি ক্ষুদ্র আকৃতির )। কসমিক স্ট্রিংগুলি মহাকর্ষ তরঙ্গও নিঃসরণ করতো। কারণ তাদের ভর ছিল অনেক। কসমিক স্ট্রিং তরঙ্গাকারে চলার দরূন, তারা শক্তি বিকিরণ করতে করতে পথ চলতো। তাই কসমিক স্ট্রিং এখন আর মহাবিশ্বে নেই। তবে সম্প্রতি মহাকর্ষ তরঙ্গ শনাক্তকরণ যন্ত্র লাইগোর একদল বিজ্ঞানী বলছেন যে, যেহেতু কসমিক স্ট্রিং মহাকর্ষ তরঙ্গ সৃষ্টি করতো, তাই ওই মহাকর্ষ তরঙ্গ ডিটেক্ট করা সম্ভব হতে পারে। স্ট্রিংগুলি যেকোনো আকৃতির হতে পারতো এবং ভেঙে নতুন স্ট্রিংও গঠন করতে পারতো! কসমিক স্ট্রিং অসমঘনত্বের মহাবিশ্বের খুব ভালো ধারণা দেয়।
অনেকে আবার কসমিক স্ট্রিং নিয়ে নতুন নতুন স্বপ্ন দেখছে।
ডার্ক ম্যাটারও কসমিক স্ট্রিংয়ের মতো অসমঘনত্বের। তাই কিছু বিজ্ঞানী কসমিক স্ট্রিংকে ডার্ক ম্যাটারের অস্তিত্বের কারণ হিসেবে কসমিক স্ট্রিংকে দায়ী করেন। আবার অনেকে কসমিক স্ট্রিংয়ের সাহায্যে টাইম ট্র্যাভেলেরও স্বপ্ন দেখেন।
কসমিক স্ট্রিং কসমোলজিতে এক নয়া দিগন্তের আলো দেখিয়েছিল। হয়তো এই আলোই ভবিষ্যতে আরো বড় কোনো মহাজাগতিক রহস্যেএ আলোর উৎসের দিকে নিয়ে যাবে........
সূত্রঃ Cosmic Strings And Other Topological Defects. By - A.Vilenkin and E.P.S Shellard
এক মহাজাগতিক চিন্তার অবসান!
বিগ ব্যাং কসমোলজিতেতে বহুল পরিচিত তত্ত্ব। বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির রহস্য ব্যাখা করতে এ পর্যন্ত অনেক তত্ত্ব প্রস্তাবিত হয়েছে। তন্মধ্যে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও গৃহীত তত্ত্বটির নামই বিগ ব্যাং বা মহাগর্জন তত্ত্ব। এছাড়া অন্য কোনো তত্ত্ব ধরে টিকতে পারেনি! বিগ ব্যাং তত্ত্বটি এখন কসমোলজির প্রাণ বলা যায়।
১৯১৫ সালে আইনস্টাইনের তার বিশ্বখ্যাত তত্ত্ব জেনারেল রিলেটিভিটি প্রকাশ করলেন। তবে অদ্ভুদ ব্যাপার ছিল যে বক্রজ্যামিতির ফলাফলগুলো প্রসারণশীল মহাবিশ্ব ছাড়া মেলে না। এদিকে আইনস্টাইন সাহেবও স্থির মহাবিশ্বে বিশ্বাসী। তাই তিনি একটি বাড়তি মহাকর্ষীয় ধ্রুবক এনে তার সূত্রে লাগিয়ে মহাবিশ্বের প্রসারণকে থামিয়ে দিলেন, থুক্কু স্থির মহাবিশ্ব প্রমাণের চেষ্টা করলেন। কিন্তু বিশের দশকের শেষ দিক জ্যোতির্বিদ এডুইন হাবল তার ১০০ ইঞ্চি টেলিস্কোপ দিয়ে গ্যালাক্সিদের রক্তিম সরণ পর্যবেক্ষণ করে প্রমাণ করলেন যে মহাবিশ্ব প্রতিনিয়ত প্রসারিত হচ্ছে। যে বস্তু কোনো বস্তু থেকে যতো দূরে তার প্রসারণও ততো বেশি বেগে হচ্ছে। তো এই ব্যাপারটি থেকেই বিগ ব্যাং তত্ত্বের সূচনা হয়েছে। জর্জ গ্যামো বললেন, যেহেতু মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তু একে অপর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, সেহেতু অতীতে নিশ্চয়ই কোনো একসময় মহাবিশ্বের সবকিছুই একসাথে ছিল এবং বিস্ফোরিত হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে ( চিন্তাশীলদের জন্য জানিয়ে রাখি যে এটি আমাদের প্রচলিত ধ্যান-ধারণার মতো কোনো বিস্ফোরণ নয় )। গ্যামো হিসাব করে দেখালো যে তাহলে মহাবিশ্বের আদি আলো কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড পুরো মহাবিশ্বে ছড়িয়ে থাকার কথা, যা পরে প্রমাণিতও হয়েছে। এছাড়াও আধুনিক বিগ ব্যাং মডেল অনুযায়ী মহাবিশ্বের গড় তাপমাত্রা হওয়া উচিত প্রায় ৩ ডিগ্রী কেলভিন, যা প্রমাণিত ( ২.৭৩ ডিগ্রী কেলভিন পাওয়া গেছে)। আবার হাইড্রোজেন-হিলিয়াম গ্যাসের অনুপাত পর্যবেক্ষণ করেও ( নীহারিকা থেকে) বিগ ব্যাং থিওরির প্রমাণ পাওয়া গেছে!
তো এই বিগ ব্যাং কিন্তু একেবারে নিখুঁত কোনো তত্ত্ব ছিল না। ব্যাপারটা একটু খোলাসা করি। মহাবিশ্বের সবকিছু বিগ ব্যাংয়ের ১০^-৪৩ সেকেন্ড পর্যন্ত শক্তিরূপে ছিল। অর্থাৎ আইনস্টাইন E=mc^2 সূত্র মেনে তখনো শক্তি থেকে পদার্থের সৃষ্টি হয়নি। বিগ ব্যাংয়ের ২০ মিনিট পরে প্রথমবারের মতো প্রোটন ও নিউট্রন মিলে নিউক্লিয়াস গঠিত হয়। আর ৩৮০,০০০ বছর পরে নিউক্লিয়াস ইলেক্ট্রনকে কব্জা করে পরমাণু তৈরি করে। আর পরে এই পরমাণু দিয়েই সব মহাজাগতিক বস্তুর সৃষ্টি হয়েছে। বিগ ব্যাং তত্ত্বানুসারে মহাবিশ্বের সকল জায়গায় শক্তি কিংবা পদার্থের পরিমাণ সমান হওয়া উচিত। কিন্তু বাস্তবে তা দেখা যায় না। একদিকে ব্ল্যাকহোলের ঘনত্ব ব্যাপক, আরেকদিকে মহাবিশ্বের অধিকাংশ ফাঁকা স্থানের ঘনত্ব প্রতি ঘনসে.মিতে মাত্র একটি কণা। কসমোলজিস্টরা এ নিয়ে বিরাট চিন্তার মধ্যে পড়ে গেলেন!
অনেক বিজ্ঞানীদের মতে বিগ ব্যাংয়ের পর শক্তির সুষম বণ্টন হয়নি। এর পক্ষে ১৯৭০ সালে ইংলিশ পদার্থবিদ থমাস কিবল বিগ ব্যাংয়ের পর যত সময় পর্যন্ত সকল বল একসাথে ছিল তার একটি ম্যাথমেটিক্যাল মডেল উপস্থাপন করেন।
এই মডেল অনুসারে বিগ ব্যাংয়ের পর অতি উচ্চ গতিতে মহাবিশ্বের স্ফীতির জন্য শক্তি সুষমভাবে বণ্টিত না হয়ে স্ট্রিং আকারে বন্টিত হয়। এই মহাজাগতিক স্ট্রিংকেই কসমিক স্ট্রিং বলে। এই স্ট্রিংগুলো পুরোটাই ছিল শক্তির তৈরি। কসমিক স্ট্রিংগুলো আলোর গতিতে ছুটে যেতে পারতো। মহাজাগতিক তন্তুগুলো আসলে ১ মাত্রার ছিল, তাই এগুলো দৈর্ঘ্য বরাবর ছুটে যেতে পারতো ( ঠিক ১ মাত্রা বললে ভুল হবে, কসমিক স্ট্রিংগুলোর প্রস্থ ছিল অতি ক্ষুদ্র আকৃতির )। কসমিক স্ট্রিংগুলি মহাকর্ষ তরঙ্গও নিঃসরণ করতো। কারণ তাদের ভর ছিল অনেক। কসমিক স্ট্রিং তরঙ্গাকারে চলার দরূন, তারা শক্তি বিকিরণ করতে করতে পথ চলতো। তাই কসমিক স্ট্রিং এখন আর মহাবিশ্বে নেই। তবে সম্প্রতি মহাকর্ষ তরঙ্গ শনাক্তকরণ যন্ত্র লাইগোর একদল বিজ্ঞানী বলছেন যে, যেহেতু কসমিক স্ট্রিং মহাকর্ষ তরঙ্গ সৃষ্টি করতো, তাই ওই মহাকর্ষ তরঙ্গ ডিটেক্ট করা সম্ভব হতে পারে। স্ট্রিংগুলি যেকোনো আকৃতির হতে পারতো এবং ভেঙে নতুন স্ট্রিংও গঠন করতে পারতো! কসমিক স্ট্রিং অসমঘনত্বের মহাবিশ্বের খুব ভালো ধারণা দেয়।
অনেকে আবার কসমিক স্ট্রিং নিয়ে নতুন নতুন স্বপ্ন দেখছে।
ডার্ক ম্যাটারও কসমিক স্ট্রিংয়ের মতো অসমঘনত্বের। তাই কিছু বিজ্ঞানী কসমিক স্ট্রিংকে ডার্ক ম্যাটারের অস্তিত্বের কারণ হিসেবে কসমিক স্ট্রিংকে দায়ী করেন। আবার অনেকে কসমিক স্ট্রিংয়ের সাহায্যে টাইম ট্র্যাভেলেরও স্বপ্ন দেখেন।
কসমিক স্ট্রিং কসমোলজিতে এক নয়া দিগন্তের আলো দেখিয়েছিল। হয়তো এই আলোই ভবিষ্যতে আরো বড় কোনো মহাজাগতিক রহস্যেএ আলোর উৎসের দিকে নিয়ে যাবে........
সূত্রঃ Cosmic Strings And Other Topological Defects. By - A.Vilenkin and E.P.S Shellard
No comments